অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব
আফরোজা অদিতি
অস্ট্রেলিয়া একটি দ্বীপ-মহাদেশ। দেশটির পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৪০০০ কিমি, উত্তর দক্ষিণে প্রায় ৩৭০০ কিমি দীর্ঘ। বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মহাদেশ, কিন্তু ৬ষ্ঠ বৃহত্তম দেশ। অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা
অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা এবং এর বৃহত্তম শহর সিডনি। সিডনি গিয়েছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত সিডনি। এই শহরে প্রায় ৪৩ লক্ষ লোকের বাস। অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা
আমরা সেই জনবহুল সিডনির উদ্দেশে ওড়ার জন্য চেকিং সেরে বসে আছি। সময় চলে যাচ্ছে, কিন্তু ডাক আসছে না। সবাই ব্যস্ত কী হলো, কী হলো?
পরে শুনতে পেলাম পাইলটকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! ফিরে এলাম। খুব আশ্চর্য হলাম, এই যে একটি দিনের অপচয়, কিন্তু কোনো গোলমাল নেই, চিৎকার নেই, ভাঙচুর নেই। শান্ত, স্থির নদীর মতো বিমান বন্দর!
সারাদিনের বিরক্তি থাকলেও, কোন হাঙ্গামার মধ্যে এই বিরক্তির প্রকাশ নেই! আমাদের হাত থেকে একটি দিন চলে গেল কিছু না-করে শুধু বসে থেকে! আমি মেয়েদের বললাম, এরকম যে হবে তা আগেই জানতাম।
ওরা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, কী বলি শোনার জন্য; বললাম, দেখলে না বারবার আমি চেকিং-গেইট দিয়ে ঢোকার সময় ক্যাঁ-ক্যুঁ শব্দ হচ্ছিল!
আসলে এমন অবস্থাই হয়েছিল আমার, ওই ক্যাঁ-ক্যুঁ শব্দের জন্য চেকিং-গেইট দিয়ে একবার ঢুকেছি আর বের হয়েছি, এভাবে পাঁচবার, কিন্তু শব্দ কিছুতেই থামছিল না! চুরি, মালা, দুল, জুতা, চাদর সব খুলে দিলাম, তাও শব্দ থামছিল না।
নিজের কছেই খুব বিরক্ত লাগছিল, তার পর গেইটের ওপাশে দাঁড়ানোর পর বিরক্তি মুখ লক্ষ্য করে একজন অফিসার বললেন, ‘ভয় পাবেন না খালাম্মা, এই মেশিন দিয়ে চেক করবো, গায়ে হাত লাগবে না।’
তার পর মেটাল ডিটেক্টর লাগিয়ে দেখার পরে ছাড়পত্র। এতকিছুর পর যদি প্লেনের পাইলট হাওয়া হয়ে যায়, তাহলে মেজাজ কার ভালো থাকে!
মেজাজ খারাপ নিয়ে বাসায় এলাম। এমনিতেই সময় কম, তার পর আবার একটি দিনের অপচয়! এটিকে অপচয় না-বলে অভিজ্ঞতা বললেও ঠিক হবে!
পরে অবশ্য ক্যাঁ-ক্যুঁ শব্দের কারণ বের করেছিলাম, ওইদিন তাড়াহুড়ো করে ক্রিমের বদলে সানস্ক্রিন লোশন মেখেছিলাম, বুঝতে পেরে ধুয়ে ফেলেছিলাম; কিন্তু ফল হয়নি, সানস্ক্রিনের রেশ রয়েই গিয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব
পরদিনের প্লেনে পৌঁছলাম সিডনি। অ্যাডিলেইডের মতো শান্ত নয় সিডনি, কোলাহলের শহর। এয়ারপোর্টে পৌঁছেই প্লেন থেকে নেমেই আমরা গেলাম লা-পেরুজ সৈকতে।
লা-পেরুজ সৈকত সুন্দর তবে ওখানে সমুদ্রে নামিনি, পাড়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেছি। সমুদ্রের সঙ্গে আকাশের মিলনমোহনা অর্থাৎ যেখানে আকাশ এসে মেশে সমুদ্রবুকে সেখানের সৌন্দর্য দেখার মতো।
আমার তো সবসময়ই সমুদ্র ভালো লাগে, ভালো লাগে আকাশ; আকাশের নীলে ভেসে যাওয়া মেঘমালা। প্লেন থেকে নেমেই গিয়েছিলাম ‘লা পেরুজ’ সৈকতে।
সৈকত থেকে এলাম (মেয়ে-জামাই) শুভ্র-সুস্মিতাদের বাসায়।
সেদিনই দেখতে গেলাম ওখানকার ‘রয়্যাল ন্যাশনাল পার্ক’। রয়্যাল ন্যাশনাল পার্ক একটি সুরক্ষিত জাতীয় উদ্যান।
সিডনি শহরের দক্ষিণে নিউ সাউথ ওয়েলস্-এ অবস্থিত। আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে গেল শুভ্র।
‘রয়্যাল ন্যাশনাল পার্ক’ ১৮১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। ৭৪ একর জমির ওপরে তৈরি এই পার্ক, দেখতে সুন্দর এই ন্যাশনাল পার্ক। এত সবুজ পাতা দেখলেই চোখের আরাম হয়।
এই পার্কের গা ঘেঁষে মহাসাগরের যে রূপ তাও খুব সুন্দর। সমুদের পাড় ঘেঁষে পাহাড়।
পাড়ে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলাম একজন গ্লাইডার-এ উড়লো আকাশে তাঁর গ্লাইডিং দেখাতে!
অনেক ওপরে উঠে ঘুরলো এদিক-ওদিক, তার পরে প্রায় ঘণ্টা আকাশে কাটিয়ে নামলো সৈকতে। মোবাইলে কাছের ছবি তোলা গেলেও, দূরের ছবি অতটা ভালো তোলা গেল না।
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব
পরদিন বের হলাম জাহাজ ঘাটের উদ্দেশ্যে। ট্রেনে ওঠর অসুবিধা নেই, ট্রেন আর প্ল্যাটফর্ম একই লেভেল-এ। ট্রেনে চাপলাম। টিকিট চেকার নেই।
আগে থেকে যে টিকিট কাটা হয়েছে, সেই টিকিটটি বন্ধ দরোজায় সংযুক্ত মেশিনে ছোঁয়ালে দরজা খুলে যাচ্ছে, আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার পর পরের জন প্রবেশেরও এই একই পন্থা।
এভাবেই প্রবেশ করা, এভাবেই বের হওয়া।
ট্রেনে গিয়ে নামলাম জাহাজ ঘাটে। ওখান থেকে জাহাজে ডারলিং হারবার। আলো ঝলমল হারবার ব্রিজ, দূর থেকে দেখলাম। যাওয়া হলো না অপেরা হাউজে।
৩১ ডিসেম্বর আগে থেকেই বর্ষবরণ উৎসব দেখার জন্য যার যার মতো অপেরা হাউজ-এর সামনে আসন নিয়েছে, লোকে-লোকারণ্য! ওখানে স্থানাভাবে যাওয়া হলো না।
তা ছাড়া যেখান থেকে আলোকসজ্জা দেখা যাবে—সেইসব নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নেয়ার সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার। আবার ফ্যামিলি নিয়ে আলোকসজ্জা দেখারও স্থান নির্দিষ্ট করা।
অমান্য করার জো নেই। জাহাজ থেকে অপেরা হাউজ দেখলাম। অপেরা হাউজে যেতে না-পারলেও দূর থেকে দেখলাম; আর যা পড়েছি-শুনেছি তারই অল্পবিস্তর লিখলাম।
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব
অপেরা হাউজে মোট ১০০০টি কক্ষ, পাঁচটি থিয়েটার হল, পাঁচটি রেস্ট হাউজ আছে। এটির ছাদ গেলজড সাদা গ্রানাইট টাইলস দিয়ে তৈরি।
থিয়েটার হলের মধ্যে কনসার্ট হলে ৩৯৮টি ও স্টুডিও থিয়েটারে ৩৬৪টি সিট রয়েছে। কনফিগারেশন পরিবর্তন করে এই সিট বাড়ানো যায়।
বর্তমানে এই অপেরা হাউজটি বেনেলং পয়েন্টে-এ অবস্থিত, সেটি প্রথমে ম্যাককুইরি বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল।
এই বন্দর ১৮১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯০১ সালে বিলুপ্ত হয়। এই হাউজ নির্মাণের জন্য নকশা আহ্বান করা হলে ২৩৩টি নকশা জমা পড়ে।
১৯৫৭ সালে এবং ড্যানিশ স্থাপত্যবিদ জন আডজেন (Jorn Utyon) অপ্রত্যাশিত ও বিতর্কিতভাবে জয়ী হন এবং ৫০০০ পাউন্ড পুরস্কার পান।
পরবর্তী সময়ে এই প্রকল্পের নির্মাণকালের সময় ধরা হয় ৪ বছর এবং নির্মাণব্যয় ধরা হয় ৭ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ৩,৫০০,০০০ পাউন্ড।
১৯৫৯ সালে এই হাউজের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে জন আডজেন (Jorn Utyon) সিডনিতে তাঁর অফিস স্থানান্তরিত করেন।
তবে সরকারের অর্থ না-পাওয়াতে ১৯৬৬ সালে এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখেন এবং পরবর্তী সময়ে পুনরায় কাজ শুরু করেন এবং নির্মাণকাজ শেষ করেন।
তিনটি পর্যায়ে এর কাজ করা হয়। প্রথম ধাপে পোডিয়াম, দ্বিতীয় ধাপে জাহাজের পালের মতো ছাদ এবং তৃতীয় ধাপে অভ্যন্তরের কাজ করা হয়।
১০ হাজার শ্রমিক এই অপেরা হাউজটি নির্মাণে পরিশ্রম করেন। ৪ বছরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও, এটি শেষ করতে ১৪ বছর সময় লাগে এবং নির্মাণব্যয় বেড়ে যায়।
১৯৭৩ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৭৩ সালে ২০ অক্টোবর রাণী এলিজাবেথ এটি উন্মুক্ত করেন। অনেক মানুষ উপস্থিত ছিল, আতশবাজি পোড়ানো হয়েছিল, সিম্ফনি বাজানো হয়েছিল।
টেলিভিশনে পুরো অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হয়েছিল, কিন্তু ড্যানিশ স্থাপত্যবিদ জন আডজনকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমন কি তাঁর নামও কোথাও রাখা হয়নি।
২০০৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ওয়াল্ড হেরিটেজ লিস্ট’-এ সিডনি অপেরা হাউজের নাম অন্তর্ভক্ত করা হয়।
অপেরা হাউজ, আশেপাশের দৃশ্য, সমুদ্র, সমুদ্রে ভাসমান জাহাজ দেখতে দেখতে হারবার পয়েন্টে এসে নামলাম।
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব
সেদিন ছিল বছরের শেষ দিন, খুব ভিড়। লোকে লোকারণ্য। আলোকমালাতে সজ্জিত চারদিক। আমরা এসে হারবার পয়েন্টে নির্দিষ্ট স্থানে এলাম।
এখানে বছরের শেষদিন যে আলোকসজ্জা দেখানো হয়, অর্থাৎ বর্ষবরণ উৎসব হয়—তার জন্য কোনো টিকিট কাটতে হয় না।
এখানে পরিবার নিয়ে আসে সকলে। সরকার থেকে সময় বেঁধে দেয়া হয় কয়টা পর্যন্ত এখানে এসে ঢুকতে পারবে, কয়টায় শুরু হবে, কয়টায় শেষ হবে।
আমরা সময় মতো পৌঁছে গেলাম। মানুষের ভিড়, ঘাস-জমিতে বসতে হবে।
ওখানে খাবার-দাবার চা-কফি সব পাওয়া যায়। কী নেয়া যাবে, আর কী নেয়া যাবে না—সে সম্পর্কিত বিধি-নিষেধ সকলেই মেনে চলে।
দুই-তিন মাসের বাচ্চা নিয়েও এসেছে, সন্তান-সম্ভবা তারাও এসেছে। চাদর পেতে বসে আছে, কেউ-বা শুয়ে আছে।
সন্ধ্যা সাতটা থেকে আলোর উৎসব শুরু হবে। পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার আলোর উৎসব।
এই আলো-উৎসবের আয়োজক সরকার। বছরের শেষদিনের আলোকসজ্জাতে নতুন বছরকে বরণ করা।
এভাবে আলোর উৎসব ভালো লেগেছে! আমার কাছে আরো আশ্চর্য লেগেছে, এত মানুষ, কিন্তু কোন চিৎকার-ঠেলাঠেলি-মারামরি-গণ্ডগোল নেই! আলোর উৎসব দেখে ফিরে এলাম বাসায়।
সিডনিতে অনেক স্থান দেখার থাকলেও, সময় নিতান্তই কম থাকায় কিছু না-দেখেই অতৃপ্ততা নিয়েই তার পর দিন ফিরে এলাম অ্যাডিলেইড।
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব
অ্যাডিলেইড ফিরে এসে গেলাম অ্যাডিলেইড জু দেখতে। এটি প্রাচীন চিড়িয়াখানার মধ্যে দ্বিতীয়। ১৮৮৩ সালে ২৩ মে এর উদ্বোধন করা হয়। অনেক প্রকারের জন্তু, পাখ-পাখালি আছে।
পাণ্ডা দেখতে পেলাম। আমাদের দেখে পাণ্ডা দুটো বাঁশ খাওয়া শুরু করলো। বড় পাণ্ডাটির নাম ওয়াং ওয়াং, আর ছোটটির নাম ফুনি।
শীলমাছ, শুশুক, জলহস্তি, ক্যাঙ্গারু, সাপ, ছোট ছোটোনীল ব্যাঙ সব দেখে এলাম। লম্বা গলা জিরাফ দেখলাম, দেখলাম নানান রকম পাখি। আ্যডিলেইড জু’তে প্রবেশ ফি আছে।
কোনো কোনো প্রাণীর জন্য ঘেরা দেওয়া থাকলেও, কিছু কিছু প্রাণী আছে ঝোপঝাড় গাছপালার মধ্যে ছেড়ে দেওয়া; দাবানলের আগে গিয়েছিলাম তাই দেখতে পেয়েছিলাম!
অ্যাডিলেইড জু-এর পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেন। এই উদ্যানটি সুন্দর মনোরম আর্কিটেকচারের বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
কাঁচঘেরা ঘরের মধ্যে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক উদ্যান। কাঁচের ভাস্কর্য আছে। ক্রিসমাস এবং গুড-ফ্রাইডে ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকে।
এখানে কোনো টিকিট নেই। ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ওখানে পাম হাউজ, আমাজান ওয়াটার লিলি ছাড়াও নানান ধরনের উদ্ভিদ আছে। আছে হরেকরকম ফুল গাছ।
পাখি বসছে গাছে গাছে, ঘুরছে ঘাসে ঘাসে। একটি গাছের ডালে ঝুলে আছে অনেকগুলো বাদুর।
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা
আমরা আর একদিন গেলাম ‘হ্যানডর্ফ’। জার্মান-গ্রাম বলে পরিচিত। হ্যানডর্ফ অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম জার্মান ভিলেজ।
এখানে জার্মান গ্রামের ঐতিহ্য ধরে রাখা হয়েছে। অ্যাডিলেইড শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রিওয়েতে ২০ মিনিটে যাওয়া যায় এই জনপদে।
হ্যানডর্ফের মূল রাস্তায় পাইয়োনিয়র মেমোরিয়াল উদ্যানগুলি হ্যানডর্ফের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
হ্যানডর্ফ যেতে রাস্তার পাশে যে সবুজ গাছগুলি দেখা যায়, তা ১০০ বছরের বেশি পুরনো।
হ্যানডর্ফ থেকে অ্যাডিলেইড হিলস, বারোস, ম্যাকলারেন ভ্যালি দেখতে যাওয়া যায়। থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে।
এখানে জার্মান খাবারের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান, ইউরোপিয়ান খাবার, কফি, মিষ্টি পাওয়া যায়। দোকান আছে, রেস্তোরাঁ আছে।
অ্যাডিলেইড থেকে ২৮ কিমি দূরে এবং মাউন্ট বার্কার থেকে ৭ কিমি দূরে অবস্থিত হ্যানডর্ফ নামের এই জার্মান গ্রামটি।
অত্যাচার-নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা পেতে জার্মান থেকে যে অভিবাসীরা এসেছিলেন—তাঁরা এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন।
যে জাহাজে তাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের সহযোগিতা করেছিলেন—সেই ‘জেব্রা’ নামের জাহাজের ক্যাপ্টেইন হ্যান (Hahn)। তাঁরই নামানুসারে এই গ্রামটির নামকরণ করা হয় হ্যানডর্ফ (Hahndorf)।
হ্যানডর্ফের প্রতিষ্ঠা দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ান ইতিহাসের একটি অংশ হলেও, ১৯১৭ সালে যখন ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়—সেই সময় দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া সরকার অনেক জার্মান স্থানের নাম পরিবর্তন করে,
তখন এই জায়গার নাম বদল করে আম্বলসাইড (Ambleside) নামকরণ করে। তবুও সকলের কাছে এটি হ্যানডর্ফ বলেই পরিচিত।
এটি গ্রাম নয়, বলা যায় গ্রামীণ পরিবেশ ছোঁয়া একটি শহর। এখানে জার্মান ফোক জাদুঘর আছে, দোকান-পাট আছে। দেখলাম, ঘুরলাম।
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা
আমরা ১৮৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চাইনিজ রেস্তেরাঁয় খেলাম। ঐ চাইনিজ রেস্তোরাঁয় এখনো মাও সে তুং-এর ছবি টাঙিয়ে রেখেছে।
কয়েকটি বুটিক শপে ঢুঁ দিলাম। ভেতরের ব্যবস্থা ভালো, সুন্দর সব পোশাক-আশাক, সাজুগুঁজু করার জিনিসপত্র; অবশ্য ছেলেদের থেকে মেয়েদের ব্যবহার্য পোশাক-আশাকই বেশি।
অ্যাডিলেইড থেকে হ্যানডর্ফ যাওয়ার পথটি চমৎকার। ভালো লেগেছে পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে সবুজের সমারোহ। অ্যাডিলেইড-এর ভেতরে ঘুরে দেখলাম, চমৎকার লেগেছে!
ওখানে মহাসমুদ্র, কিন্তু গাছগুলো খুব চমৎকার। কারণ এখানে মানুষ যেমন গছের যত্ন নেয় তেমনি যত্ন নেয় প্রকৃতি। মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হয়।
কবে কখন বৃষ্টি হবে, তাপমাত্রা কত থাকবে তা আবহাওয়াবার্তা থেকে জানা যায়—যা বার্তা দেয় ঠিক সেটিই হয়।
ওখানে অবশ্য শুধু মহাসাগর-সাগর নয়, নদীও আছে—যেটি দেখা হয়নি। নদীটি ‘রিভার টরেন্স’ নামে পরিচিত। এই রকম অনেককিছু দেখা হয়নি, এত কম সময়ে সব দেখা সম্ভব হয় না।
তবুও যেটুকু দেখেছি—যা দেখেছি—তাতেই সুখ পেয়েছি। অ্যাডিলেইড-সিডনি থাকার পালা শেষ করে আবার বাংলাদেশ, আমার প্রিয় মাতৃভূমি।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া (Wikipedia) এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা
…………………
পড়ুন
১৪ thoughts on “অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব”