এশিয়া, ধর্মালয়, বিদেশ, বিমান পথে ভ্রমণ

দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি

Dakshineswar Kalimandir

দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি

আফরোজা অদিতি

পাখি তার ডানা মেলে ওড়ে আকাশে, বাতাসে রেখে যায় তার ওড়ার আনন্দের ছোঁয়া! মানুষ পাখির মতো উড়তে পারে না, তবে সে ওড়ে; ওড়ে কলের পাখির অভ্যন্তরে নিশ্চিন্ত আরামে! মানুষ সেখানে বসেই আস্বাদন করে তাঁর খণ্ডজীবনের ডানাবিহীন ওড়ার অভিজ্ঞতা—রসে সিক্ত হয় ভ্রমণমন!

মানব-মনের সবচেয়ে বড় ইচ্ছা—এই বিশ্বের সব খুঁটিনাটি দেখা। মানুষ তাই দেখতে যায়, হাঁটতে যায়, বেড়াতে যায়। কোথাও গেলে মন প্রফুল্ল হয়। অন্তত আমার হয়।

আমার মন যাযাবর, কিন্তু আমি যাযাবর হতে পারিনি। কী জানি কেন আমার কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠে না। আবার যদি কোথাও যাওয়া হয় অতোটা দেখাও হয়ে ওঠে না।

মানব মনের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নিজস্ব প্রয়োজনে অনেক জিনিস আবিষ্কার করেছে, ব্যবহার করছে, তেমনি এই কলের পাখি।

এই পাখির সাহায্যে অল্প সময়ে আকাশ-পথে উড়াল দিয়ে এ দেশ থেকে সে দেশ চলে যাওয়া যায়; আমরাও গেলাম।

অনেকদিন থেকে কথা হচ্ছিল চেন্নাই যাওয়ার, ২০১৯-এর মার্চে গেলাম চেন্নাই।

তবে মানুষ কোথাও বেড়াতে গেলে যাওয়া আর ফিরে আসার দিনটা থাকে পথে। দূরে গেলে আকাশ-পথে। কাছে-পিঠে গেলে হয় জল-পথ না হয় স্থল-পথ।

আমরা উড়াল দিলাম আকাশ-পথে চেন্নাই। উদ্দেশ্য ছিল বেড়ানো আর চিকিৎসা দুটোই।

আমাদের যাওয়ার কথা ছিল ৫ তারিখ, কিন্তু রওয়ানা হলাম ৭ তরিখে।

প্লেন আকাশে উড়তেই পড়ল মেঘেদের পাল্লায়! ঘন মেঘে প্লেন বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল, দুলছিল! তারপর মেঘ-বাতাস কেটে আলোতে বেরিয়ে আবার সুস্থির হলো সে!

তারপর বিমান বন্দর। খুব সুন্দর সাজানো-গোছানো। বিমান বন্দরের সব ফর্মালিটি শেষ করে এসে উঠলাম হোটেলে। আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল।

হোটেলে উঠে রাতে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন অ্যাপলো হাসপাতাল। মানুষের পর মানুষ। জীবন যখন আসে, তখন সঙ্গে নিয়ে আসে অসুখ-বিসুখ আর মৃত্যু!

হাসপাতালে না-গেলে তা বুঝতে পারা কঠিন; মানুষের কতো রকমের অসুখ! অসুখ-বিসুখ দেখাতে দেখাতেই ফেরার সময় হয়ে গেল।

চেন্নাইয়ে শুধু মেরিনো বীচ ছাড়া কিছুই দেখা হলো না! কোথায় যাবো, কোথা দিয়ে যাবো—সব ঠিক করেই টিকিট কেটে রাখা ছিল, তাই না-দেখেই ফেরা!

দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি

চেন্নাই থেকে ফেরার পথে বোলপুর শান্তিনিকেতন হয়ে কলকাতা। তারপর বাংলাদেশ। শান্তিনিকেতন হলো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের শেকড় প্রোথিত করে ধরে রেখেছেন আমাদেরই নিজস্বতায়। আমরা যেখানেই যাই এই প্রোথিত শেকড় বা মূলে আমাদের ফিরে আসতেই হয়।

শান্তিনিকেতনের কথা বলতে গেলে তো কথা বলে শেষ করা যায় না, যাবে না! আমাদের শেষ হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আবার শুরুও হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সেহেতু আমি বোলপুর-শান্তি নিকেতনের কথা না-বলে কলকাতার দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের রাণী রাসমণি বা ‘লোকমাতা’ রাসমণি দাসী এবং

তাঁরই প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের কথা দিয়ে শুরু করি। দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ধনী বিধবা জমিদার রাণী রাসমণি দাসী।

কিংবদন্তি অনুসারে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে এই মন্দির নির্মাণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন তিনি।

কথিত আছে, ১৮৪৭ সালে বিশ্বেশ্বর দর্শনে দাসদাসী লেঠেল বরকন্দাজ নিয়ে কাশী যাওয়া জন্য ২৪টি (মতান্তরে ২৫টি) বজরা প্রস্তুত করেছিলেন গঙ্গার ঘাটে।

কিন্তু রওয়ানা দেওয়ার পূর্বমুহূর্তে মা কালী স্বপ্নে দেখা দিয়ে তাঁকে আদেশ করেছিলেন ভাগীরথীর তীরে মনোরম পরিবেশে মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে নিত্য পূজা এবং অন্নভোগের ব্যবস্থা করতে;

সেখানেই তিনি আবির্ভূত হয়ে পূজা গ্রহণ করবেন এবং রাণী রাসমণি ভাগীরথীর তীরে মন্দির নির্মাণের জন্য দেবী ভবতারিণীর নির্দেশ পেয়ে বিশ্বেশ্বর দর্শন যাত্রা স্থগিত করেছিলেন।

দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি

আমরা জানি, গঙ্গার অনেক নামের মধ্যে ভাগীরথীও একটি নাম। মহাভারতের বর্ণনা অনুসারে রাজা সগরের ষাটহাজার পুত্র ছিল।

রাজা অশ্বমেধ যজ্ঞ করার ইচ্ছা পোষণ করাতে দেবরাজ ইন্দ্র ঈর্ষান্বিত হয়ে অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া অপহরণ করেন।

সগর রাজার ষাটহাজার পুত্র সেটি খুঁজতে খুঁজতে পাতালে মহর্ষি কপিলের আশ্রমে প্রবেশ করে ঘোড়াটিকে আশ্রমে দেখতে পেয়ে মহর্ষিকে ঘোড়া অপহরণকারী মনে করে এবং মহর্ষির ধ্যান ভঙ্গ করে।

মহর্ষি, তাঁর দীর্ঘদিনের ধ্যান ভঙ্গের জন্য ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁদের ভস্ম করেন অর্থাৎ মেরে ফেলেন। সগরপুত্রদের পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন না-হওয়ায় প্রেতপুরীতে ঘুরতে থাকে তাঁরা।

তাঁদের আত্মার মুক্তির জন্য সগর রাজের বংশধর, রাজা দীলিপের পুত্র ভগীরথ, স্বর্গনদী দেবী গঙ্গাকে মর্তে প্রবাহিত করে সগরপুত্রদের আত্মার সদ্গতি করার জন্য ব্রহ্মার তপস্যা শুরু করে।

ব্রহ্মা, তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে স্বর্গনদী গঙ্গাকে মর্তে এসে সগরপুত্রদের আত্মার সদ্গতি করার নির্দেশ দিলে অপমানিত বোধ করেন দেবী গঙ্গা এবং

পৃথিবীকে প্লাবিত করার কথা ভাবেন। মর্তের অনিষ্ট হবে সে-কথা ভেবে ভগীরথ, শিবের আরাধনা শুরু করে।

শিব, ভগীরথের আরাধনায় তুষ্ট হয়ে ক্রদ্ধ গঙ্গাকে শান্ত ধীর-স্থিরভাবে প্রবাহিত করার জন্য তাঁর জটাতে ধারণ করেন এবং ছোট ছোট ধারায় প্রবাহিত করেন।

স্বর্গনদী গঙ্গার ধারণকর্তা শিব হওয়ায় পবিত্র হন গঙ্গা এবং পাতালে প্রবাহিত হওয়ার পূর্বে মর্তে সাধারণ জীবের মুক্তির লক্ষ্যে একটি ধারা রেখে যান।

সগর রাজের ষাটহাজার পুত্রের আত্মা সদ্গতি লাভ করে এবং প্রেতপুরী থেকে মুক্ত হয় এবং ভগীরথীর তপস্যায় স্বর্গনদী গঙ্গা মর্তে প্রবাহিত হয়ে ধারা রেখে গিয়েছেন বলেই গঙ্গার অন্য নাম হয়েছে ভাগীরথী।

স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল—এই ত্রিলোকে প্রবাহিত গঙ্গা ‘ত্রিপথগা’ নামেও পরিচিতি পেয়েছে।

দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি

এই ‘ত্রিপথগা’ বা গঙ্গা বা ভাগীরথীর তীরে স্বপ্নাদিষ্ট রাণী রাসমণি মন্দিরের জন্য জায়গা ক্রয় করতে অনেকের বিরোধিতা-বিরূপতার সম্মুখীন হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি থেমে যাননি!

অনেক চেষ্টার পর রাণীর জামাতা মথুরা মোহন বিশ্বাস ‘জেমস হেস্টি’ নামের একজন ইংরেজ সাহেবের কাছ থেকে মন্দিরের জন্য এই ২০ একর জায়গা ক্রয় করেছিলেন।

‘সাহেবান বাগিচা’ নামে পরিচিত ছিল মন্দিরের এই জায়গাটি। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের নকশা এবং নির্মাণ কাজ করেন ইংরেজ কোম্পানি! নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৪৭ সালে এবং শেষ হয় ১৮৫৫ সালে। মন্দির নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল নয় লক্ষ টাকা।

মন্দিরের জন্য জমি কিনতে যেমন বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল রাণীকে, তেমনি মন্দির প্রতিষ্ঠা করতেও অনেকের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি।

এই জমি ক্রয়ের সময় যেমন ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ খ্রিস্টানদের কুঠি, মুসলমানদের পীরের দরগার জমিতে মন্দির নির্মাণ করা যাবে না বলে বাধা দিয়েছিলেন এবং

মন্দির নির্মাণকালে হিন্দু বিধবাদের শাস্ত্রে মন্দির নির্মাণের কোনো অধিকার নাই বলে মামলার পর মামলা করেছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে।

শুধু তাই নয়, জাতপাত সচেতন উচ্চশ্রেণির ব্রাহ্মণগণ এই মন্দিরের পূজারী হতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কেউ যখন পূজারী হতে রাজী হননি, তখন রাণী রাসমণি হতাশ হয়েছিলেন।

ঠিক সে-সময় কামার পুকুরের শাস্ত্রজ্ঞ রামকুমার চট্টোপধ্যায় যিনি ঝামা পুকুরের চতুষ্পাঠির অধ্যাপক ছিলেন,

তিনি বলেছিলেন ‘রাণী রাসমণি যদি উক্ত সম্পত্তি কোনো ব্রাহ্মণকে দান করেন এবং সেই ব্রাহ্মণ ঐ মন্দিরে দেবী প্রতিষ্ঠা করেন এবং অন্নভোগের ব্যবস্থা করেন,

তাহলে শাস্ত্র-নিয়ম যথাযথভাবে রক্ষিত হবে এবং উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণগণের ঐ মন্দিরের প্রসাদ গ্রহণ করলেও, কোনো দোষ হবে না।’

সে সময় প্রধান পুরোহিত হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন শ্রী রামকুমার চট্টোপাধ্যায়।

পরবর্তী সময়ে শ্রী রামকুমার চট্টোপধ্যায় দেহ রাখার (মারা গেলে) পর তাঁর ছোটভাই গদাধর (রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব) ছোট ঠাকুর হিসেবে কাজ শুরু করেন।

ছোট ঠাকুরের জন্ম ১৮৩৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হুগলি জেলার কামারপুকুরে; তাঁর কোষ্ঠি নাম শম্ভুরাম। ১৮৮৬ সালের ১৬ আগস্ট মাত্র ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

.

রামকৃষ্ণ দেব ঊনবিংশ শতকের প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি যোগসাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু।

তাঁর মৃত্যুর পর রামকৃষ্ণ আন্দোলনের বিকাশ ও প্রসারের জন্য সারদা দেবীর (সারদা দেবী, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের স্ত্রী) ভূমিকা অনস্বীকার্য।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব-এর দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয় রামকৃষ্ণমিশন। তাঁর প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।

শ্রী রামকুমার চট্টোপধ্যায় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসেবে যোগ দিয়ে তিনিই মা-কালীকে ‘ভবতারিণী’ দেবী হিসেবে বৃত (বরণ) করেন।

১৮৫৫ সালের ৩১ মে স্নানযাত্রার দিন এই মন্দিরে প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত করা হয়। প্রতিষ্ঠা দিবসের বিশেষ এবং প্রধান আকর্ষণ ছিল অন্নদানযতি।

এই অন্নদানযতির মধ্যে ছিল দুগ্ধসাগর, দধি পুষ্করিণী, ঘৃত-কূপ, তৈল-সরোবর, লুচি পাহাড়, মিষ্টান্নস্তূপ, পায়েস-সমুদ্র, কদলীপত্ররাশি, মৃন্ময়পাত্রস্তূপ।

জানা যায়, অন্নদানযতির জন্য হাতির পিঠে চড়িয়ে দক্ষিণেশ্বরে মনকে মন বিশুদ্ধ ঘি আনা হয়েছিল। সেদিন বাজারে মিষ্টির দাম ছিল আকাশছোঁয়া।

শোনা যায়, মন্দিরে প্রতিমা প্রতিষ্ঠার দিন লক্ষাধিক ব্রাহ্মণ প্রসাদ এবং দান গ্রহণ করেছিলেন। এ ছাড়া কাঙালিভোজন তো ছিলই।

দক্ষিণেশ্বরের এই দেবীর প্রকৃত নাম জগদীশ্বরী। বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে তাঁকে ‘ভবতারিণী’ নামেই পূজা করা হয়।

রাণী রাসমণি ছিলেন মা কালীর পরম ভক্ত। জমিদারী সেরেস্তার কাগজপত্রে শিলমোহরে খোদাই করা থাকতো ‘কালী পদ অভিলাষিণী রাণী রাসমণি।’

দক্ষিণেশ্বর এই কালীমন্দিরে দেবী কালীকে ‘ভবতারিণী’ নামে পূজা করা হলেও, মূল মন্দিরটি হলো নবরত্ন মন্দির। নবরত্ন মন্দিরের উত্তরে শ্রীশ্রী রাধাকান্ত মন্দির অবস্থিত।

শ্রীশ্রী রাধাকান্ত মন্দির নামে পরিচিত এই মন্দিরে রজত সিংহাসনে ২১.৫ (সাড়ে একুশ) ইঞ্চি কৃষ্ণ এবং ১৬ (ষোলো) ইঞ্চির রাধিকা মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে।

রাণী রাসমণির জানবাজারের গৃহদেবতা (রঘুবীর, জনার্দন, নাড়-গোপাল) বর্তমানে দক্ষিণেশ্বরেই অধিষ্ঠিত।

মন্দিরের আঙিনার দৈর্ঘ ৪৪০ ফুট। পশ্চিম দিকে উত্তর দক্ষিণ থেকে সারিবদ্ধভাবে ১২টি শিব মন্দির আছে।

এ ছাড়া চাঁদনি, বকুলতলা ঘাট, সিংহদুয়ার, নহবৎখানা, অতিথিশালা, ভোগ রন্ধনশালা, বলীপিঠ, দুধপুকুরের সোপান এবং প্রধান ফটক আছে।

রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের দক্ষিণে নাটমন্দির চত্বরেই এই ১২টি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠিত। এই ১২টি শিবমন্দিরে অধিষ্ঠিত দেবতাদের নাম :

১. নরেশ্বর ২. নন্দীশ্বর, ৩. নাদেশ্বর, ৪. জগদীশ্বর, ৫. জলেশ্বর, ৬. জঙ্গেশ্বর, ৭. যোগেশ্বর, ৮. যত্নেশ্বর, ৯. জটিলেশ্বর, ১০. নকুলেশ্বর, ১১. নাকেশ্বর, ১২. নির্জরেশ্বর।

.

শিব মন্দিরের বিপরীতে ঠিক মাঝখানে মা কালীর মন্দির। বিশেষজ্ঞের মতে, এই মন্দির কালী মন্দির হিসেবে পরিচিতি পেলেও,

এটি একটি শাক্ত, শৈব ও বৈষ্ণব দেব-দেবীর মন্দির-সমবায়। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘টেম্পল-কোঅপারেটিভ।’

এই মন্দিরের দক্ষিণে নাটমন্দির চত্বরের উত্তর-পশ্চিম কোণে গদাধর ওরফে গদাই ওরফে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব-এর বাসগৃহ।

১৮৮৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০ বছর তিনি এই মন্দিরে অবস্থান করেন।

চত্বরের বাইরে নহবত খানায় তাঁর অর্থাৎ গদাই ঠাকুর ওরফে ছোট ঠাকুরের সহধর্মিনী সারদা দেবী বাস করেছেন।

সারদা দেবী ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের পত্নী ও সাধনসঙ্গিনী এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সংঘজননী। সেটি এখন সারদা মন্দির হিসেবে পরিচিত।

মূল মন্দিরের কাছে বারোটি একই রকম পূর্বমুখী শিবমন্দির আছে; সেগুলি আটচালা স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত। গঙ্গার একটি ঘাটের দুইদিকে এই মন্দিরগুলি নির্মিত এবং এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

পূজা-অর্চনা হয়, দানধ্যান হয়। বিশেষকরে দানধ্যান করার জন্যই রাণী রাসমণি দাসী ‘লোকমাতা’ হিসেবে খ্যাতি পান।

(চলবে)

…………………

পড়ুন

আফরোজা অদিতির পাঁচটি কবিতা

গোকুল মেধ বা বেহুলার বাসরঘর

অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা

অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব

দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি

Spread the love